ব্যাংক ব্যবসায় ৯টি নতুন ব্যাংক তাদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে তাদের শাখার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এসব ব্যাংকের ক্ষেত্রে আরেকটি সুখবর হলো, এদের কোনো খেলাপি ঋণ নেই। আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে খুব বেশি আগ্রাসী হয়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে না মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশংসাও পেয়েছে নতুন ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে নতুন ব্যাংকগুলোর ওপর আলাদা বিশ্লেষণে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালভিত্তিক এ প্রতিবেদনটি রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৩ সালে নতুন ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে একটি শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং করছে। তিনটি ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন প্রবাসীরা। ব্যাংক ৯টি হচ্ছে মধুমতি, ইউনিয়ন, ফার্মারস, মিডল্যান্ড, মেঘনা, এনআরবি লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল এবং এনআরবি গ্গ্নোবাল ব্যাংক।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে নতুন ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্রই উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বিশ্লেষণ নতুন ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করবে। এসব ব্যাংক যাতে আরও ভালো করতে পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর থাকবে বলেও তিনি প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে নতুন ব্যাংকগুলোর সম্পদ দাঁড়িয়েছে সমগ্র ব্যাংক খাতের সম্পদের ২ শতাংশ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ১ শতাংশ। মোট ঋণ ও অগ্রিমে এসব ব্যাংকের অংশ ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সাল শেষে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নতুন ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান অনেক ভালো। কেননা তাদের খেলাপি ঋণ শূন্যের ঘরে। এর কারণ, তাদের ঋণ ও অগ্রিম পুরনো ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক কম। তাদের ঋণগুলো নতুন বলে এখনও কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া তারা এখনও নিরাপদ নগদ ঋণের ওপর নির্ভরশীল রয়েছে। ভবিষ্যতে সম্পদের গুণগত মান বজায় রাখার ওপর এসব ব্যাংকের টেকসই উন্নতি নির্ভর করছে। শ্রেণীকৃত ঋণ নেই বিধায় এসব ব্যাংকের প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার চাপ খুবই কম। নিয়মিত ঋণের ওপরই তাদের প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। চাপ কম থাকায় তারা শতভাগেরও বেশি প্রভিশন রাখতে সমর্থ হয়েছে।
২০১৩ সাল শেষে নতুন ব্যাংকগুলোর শাখার সংখ্যা ছিল ৬৫টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এসে তাদের শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৪টি। এর মধ্যে ৮৩টি শাখা গ্রামে। সারাদেশের মোট ব্যাংক শাখার (৯০৪০) মধ্যে নতুন ব্যাংকগুলোর অংশ প্রায় ২ শতাংশ। নতুন ব্যাংকগুলো অবশ্য পুরনো ব্যাংকগুলোর মতো আয় করতে পারেনি। ২০১৪ সালে এসব ব্যাংকের সম্পদের বিপরীতে মুনাফা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। পুরো ব্যাংক খাতে এ হার শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। নিরাপদ সম্পদের মাত্রা বেশি থাকায় তাদের মুনাফাশীলতা তুলনামূলকভাবে কম।
তবে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ অনেক কম থাকায় এসব ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত সামগ্রিক ব্যাংক খাতের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার সময় একটা উদ্বেগ ছিল যে, তারা আমানতের জন্য অশুভ প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। কিন্তু ২০১৪ সালজুড়ে ব্যাংক খাতে আমানতের নিম্নগামী হার ইঙ্গিত দেয় যে, তারা এটি করেনি। তারা আমানতের জন্য আগ্রাসী থাকলে সামগ্রিক সুদের হার বর্তমানের তুলনায় বেশি থাকত।